জাতি গঠনে নারী সমাজের ভূমিকা
হাবিবা মুনা তাকমীল
হামদ ও সালাতের পর
অদ্যকার হযরত
আয়শা সিদ্দীকা রা. পাঠাগার কর্তৃক আয়োজিত আজকের সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা মূলক বক্তৃতা
সেমিনারের মান্যবর সভাপতি বিজ্ঞ বিচারক মন্ডলী সু-দক্ষ পরিচালক ও আজকের সুধী। আপনাদের
সকলকে জানাই আন্তরিক মোবারক বাদ
আজকের নির্ধারিত
আলোচ্য বিষয় হলো “জাতি গঠনে নারী সমাজের ভূমিকা” সময়ের সংক্ষিপ্ত পরিসরে এই সম্পর্কে
সামান্য আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
সম্মানিত উপস্থিতি!
একজন আদর্শ
মা সন্তান গড়ার কারিগর, কারণ প্রতিটি সন্তানের প্রথম শিক্ষক হলো তার মা, মা যদি সৎ
হয় তাহলে সন্তান ও সৎ হবে, মা যদি দ্বীনদার হয় তাহলে সন্তান ও দ্বীনদার হবে।
মা যদি ন্যয়-নিতি,
ইনসাফ ও আদলের ঝান্ডাবাহী হয় তাহলে সন্তান ও তা হতে বাধ্য।
তাই দ্ব্যর্থহীন
কন্ঠে বলতে পারি- আদর্শ সন্তান গঠনে মায়ের ভূমিকাই সবচে বেশি এবং কার্যকরী।
এইজন্য নাবী
কারীম সা. মেয়েদেরকে বলতেন- তোমরা যখন তোমাদের সন্তানদেরকে দুধ পান করাও তখন ইনসাফ
ও তাক্বওয়ার সাথে দুধ পান করাও।
সম্মানির উপস্থিতি!
মা আল্লাহ
তালার শ্রেষ্ঠ দান, পৃথিবীর বড় নেয়ামত, সবচে আপনজন, সবচেয়ে প্রিয়জন। পৃথীবির সব ভালোবাসায়
স্বার্থ থাকতে পারে কিন্তু মায়ের ভালোবাসায় কোন স্বার্থ থাকতে পারে না। নিঃস্বার্থ
ভাবে মা সন্তানকে ভালোবাসেন। আদর স্নেহ দিয়ে বড় করে তোলেন, সন্তানের সব কষ্ট সয্যকরে,
দুঃখ কষ্ট মাটি করে, সন্তানের উন্নত ভবিষৎতের কথা চিন্তা করে। যিনি তার সন্তানের মুখে
হাসি ফুটিয়ে তোলতে চান তিনি আর কেউ নয়, তিনি হলেন আমার মমতাময়ী পৃথীবির শ্রেষ্ঠ নিয়ামত
আমার প্রানের প্রিয় মা।
তাই মহান রব্বুল
আলামীন পবিত্র কুর আনে এরশাদ করেন- তিনি কষ্টের পর কষ্ট সয্যকরে তোমাদেরকে গর্ভে ধারণ
করেছেন এবং দুধ পান করিয়েছেন ত্রিশ মাস।
সম্মানিত উপস্থিতি! এবার আসুন নারীদের
ভুমিকা নিয়ে আলোচনা করি।
আমাদের দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীই
নারী। সংসারে তারা শুধু বধূ-মাতা-কন্যার ভূমিকা পালন করে না। দেশের উন্নয়নে, দেশগড়ার কাজে, সমাজের মঙ্গলে, মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে পুরুষের পাশাপাশি
নারীরাও অপরিসীম অবদান রেখে চলছে। ঠিক এমনি ভাবে হাজার বছরের মুসলিম শাসনের ইতিহাসে নারীরা
পর্দা-শালীনতা বজায় রেখে জ্ঞানচর্চা, সমাজসেবা ও অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব
অবদান রেখেছেন এবং পুরুষদের মতোই যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। নারীসমাজের এসব অবদানের কথা স্বীকার করতে গিয়ে বিদ্রোহী
কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন一
“বিশ্বের যা-কিছু
মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
সম্মান্তি
উপস্থিতি!
মহানবী (সা.)
বিভিন্নভাবে নারীদের জ্ঞানচর্চায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাঁর যুগে অনেক প্রাজ্ঞ নারী
সাহাবি ছিলেন। নবীপত্নী আয়েশা (রা.)-এর জ্ঞানের কাছে অনেক অভিজ্ঞ সাহাবিও হার
মেনেছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে মুসলিম নারীদের অসামান্য অবদান নিয়ে ৪৩ খণ্ডের বিশাল এক
বিশ্বকোষ রচনা করেছেন। তাতে ১০ হাজারের বেশি নারী হাদিসবিশারদ ও শিক্ষাবিদের
জীবন-কর্ম-অবদান তুলে ধরা হয়।
মহানবী
(সা.)-এর যুগে নারীরা ব্যবসা-বাণিজ্যও করতেন। চিকিৎসক হিসেবেও নারী ব্যাপক অবদান
রাখেন। নারী সাহাবি উম্মে সুলাইমের নেতৃত্বে যুদ্ধাহতদের চিকিৎসা দেওয়া হতো। সে
যুগে কৃষিকাজেও নারীর অংশগ্রহণ ছিল। হস্তশিল্পের মাধ্যমেও নারীরা অর্থ উপার্জন
করতেন। ওমর (রা.)-এর যুগে প্রখ্যাত আইনজ্ঞ শিফা বিনতে আবদুল্লাহকে আদালতের
গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োগ দেওয়া হয়। আলী (রা.)-এর যুগে আয়েশা (রা.)-এর ভূমিকা
নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
খলিফা
হারুনুর রশিদের স্ত্রী জোবায়দা এবং সুলতান মালিক শাহর স্ত্রী তুরকানের
জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলো মুসলিম নারীর সমাজসেবার অনন্য উদাহরণ। একাদশ শতাব্দীতে
মুসলিম নারীরা দামেস্কে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১২টি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন, যা নারীদের দ্বারাই পরিচালিত হতো। তা ছাড়া, স্পেনের আয়েশা বিনতে আহমদ ছিলেন বিখ্যাত
ক্যালিগ্রাফার, লুবনি
ছিলেন ভাষাবিদ এবং রাবিয়া কাসিসাহ ছিলেন প্রসিদ্ধ বক্তা।
সমাজে
নারীর অসামান্য অবদানের পরিপ্রেক্ষিতেই বিখ্যাত মুসলিম স্কলার ইবনুল কাইয়িম (রহ.)
বলেন, সমাজের
অর্ধেকই নারী। বাকি অর্ধেকেরও জন্ম দেন নারী। তাই নারীরাই যেন পুরো সমাজ।
নারী আদ্যাশক্তি। তার সার্থকতা মাতৃত্বে। নারীই গর্ভে ধারণ
করেছেন হযরত মুহম্মদ (স.)-এর মতো আদর্শ মহাপুরুষকে, যাকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ তায়ালা
পৃথিবীর কোনোকিছুই সৃষ্টি করতেন না। কাজেই জাতিগঠনে নারীর ভূমিকা |জাতি গঠনে নারীসমাজের ভূমিকা | কোনো অংশেই কম নয়।
তাই কবি বলেছেনঃ
“কোনো কালে একা হয়নি কো, জয়ী পুরুষের তরবারি,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়-লক্ষ্মী নারী।”
কিন্তু আফসোস আর পরিতাপের বিষয় হচ্ছে
বর্তমান নারী সমাজ আমাদের সেই সোনালি ইতিহাস ও ঐতিহ্য থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছে।
তাই পরিশেষে আমি বলতে চাই!
আজকে আমাদের নারীদেরকে বিজাতীয় সংস্কৃতি
ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে উপনিত করেছে। তাই তাদেরকে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে জাগিয়ে
তোলতে হবে, আল্লাহ তালা তাদের মধ্যমে যে দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়েছেন তা যদি কাজে
লাগানো যায় তাহলে জাতি হিসেবে আমরাও উন্নত জাতি হতে পারবো।
সর্বপরি মহান রব্বুল আলামীনের সন্তূষ্টি
অর্জন করে এই ধরার বুক থেকে বিদায় নিতে পারবো। আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দান করুন,
আমীন।
ওয়া আখিরি দাওয়ানা আনিল হামদুল্লিলাহি
রব্বুল আলামীন,