কুরবানী বিষয়ক প্রশ্ন-উত্তর

  কুরবানী বিষয়ক প্রশ্ন-উত্তর (১ম পর্ব)

উত্তর প্রদানে : ফতোয়া বিভাগ, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা

প্রশ্ন:

কুরবানী কার উপর ওয়াজিব হয়? কী পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে একজনের উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়? জানালে কৃতজ্ঞ হব I

উত্তর:

প্রাপ্তবয়ষ্ক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী মুকীম ব্যক্তি, যে ১০ যিলহজ্ব সুবহে সাদিক থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। নেসাব হল : স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি। আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি। আর অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের সম্পদ। স্বর্ণ বা রুপার কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না হয় তবে স্বর্ণ-রুপা উভয়টি মিলে কিংবা এর সাথে প্রয়োজন-অতিরিক্ত অন্য বস্ত্তর মূল্য মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের হয়ে যায় সেক্ষেত্রেও কুরবানী ওয়াজিব হবে। স্বর্ণ-রুপার অলঙ্কার, নগদ অর্থ, যে জমি বাৎসরিক খোরাকীর জন্য প্রয়োজন হয় না এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত আসবাবপত্র-এ সবই কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬,আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫

প্রশ্ন:

আমার কাছে কিছু টাকা আছে। কী পরিমাণ টাকা থাকলে কুরবানী ওয়াজিব হয়? আর কুরবানী করলে কী ফযীলত পাওয়া যায় তা জানতে চাই।

উত্তর:

কুরবানীর দিনগুলোতে (১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত) সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা এর সমমূল্যের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের মালিক হলে কুরবানী ওয়াজিব হয়। এর চেয়ে কম সম্পদের মালিক হলে কুরবানী ওয়াজিব হয় না। (আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/১২৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫)

উল্লেখ্য, টাকা-পয়সা, সোনা-রুপার অলংকার, ব্যবসায়িক পণ্য, প্রয়োজন অতিরিক্ত জমি, সারা বছরেও ব্যবহার হয় না এমন অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র এসব কিছুর মূল্য কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। সুতরাং আপনার নিকট জমা টাকা এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার বর্তমান মূল্য পরিমাণ থাকলে আপনার উপর কুরবানী ওয়াজিব। অন্যথায় ওয়াজিব নয়।

হাদীসে কুরবানীর অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন এক হাদীসে আছে, কুরবানীর দিন পশু কুরবানীর চেয়ে আল্লাহ তাআলার নিকট প্রিয় কোনো আমল নেই। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ১/১৮০)

অন্য হাদীসে আছে, হযরত আলী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমাকে তার কুরবানীর নিকট উপস্থিত থাকতে বললেন এবং ইরশাদ করলেন, এই কুরবানীর প্রথম রক্তবিন্দু প্রবাহিত হওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ তাআলা তোমার গুনাহসমুহ মাফ করে দিবেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কি শুধু আহলে বাইতের জন্য? না সকল মুসলমানের জন্য? তিনি বললেন, এই ফযীলত সকল মুসলমানের জন্য।

-আলমুততাজিরুর রাবেহ ৩১৬; মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/১৭; আততারগীব ওয়াততারহীব ১/১৭৫

৪৮২৭. প্রশ্ন

নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যদি কুরবানীর সময় সাময়িক ঋণগ্রস্ত হয় তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে কি?

উত্তর

নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যদি কুরবানীর দিনগুলোতে সাময়িক ঋণগ্রস্ত থাকে, যা পরিশোধ করে দিলে তার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ বাকি থাকে না তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে না। আর যদি ঋণ আদায় করে দিলেও নেসাব পরিমাণ সম্পদ বাকি থাকে তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯২

প্রশ্ন:

আমাদের পরিবারে আম্মু এবং আমরা তিন ভাই আছি। পিতার মৃত্যুর পর সম্পদ বণ্টন করা হয়নি। ছোট ভাইদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের সকল আয়-ব্যয় অভিন্ন। এমন অবস্থায় আমাদের সকলের পক্ষ থেকে কি একটি ছাগল কুরবানী যথেষ্ট হবে নাকি প্রত্যেকের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব?

উত্তর:

একটি ছাগল দ্বারা এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করা যায়। একাধিক ব্যক্তি বা পরিবারের সকল সদস্যের পক্ষ থেকে একটি ছাগল কুরবানী দিলে তা যথেষ্ট হবে না। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যৌথ সম্পত্তি যদি এ পরিমাণ হয় যে, বণ্টন করলে প্রত্যেক সদস্য প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে যায় তাহলে প্রত্যেকের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে।

অবশ্য আপনাদের কেউ নেসাব থেকে কম সম্পদের মালিক হলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে না। তদ্রূপ কেউ অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে তার উপরও কুরবানী ওয়াজিব নয়।

-মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৭৬৩৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২৪২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৭৫

প্রশ্ন:

খালিদ ৭ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে, যার দ্বারা মোটামুটিভাবে তার সংসার চলে। গত কয়েকদিন পূর্বে তার আম্মা ইন্তেকাল করেন। পিতা আগেই মারা গেছেন। মায়ের মৃত্যুর পর তার মামারা তার আম্মার পৈত্রিক সম্পত্তি (৬ শতাংশ জমি, যার প্রতি শতাংশের মূল্য প্রায় এক লক্ষ টাকা) তার ও তার তিন বোনের নামে ১.৫ শতাংশ করে সমানভাবে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে। এছাড়া খালিদের উল্লেখযোগ্য কোনো সম্পদ নেই। তবে বর্তমানে তার কাছে নগদ ৫০ হাজার টাকা আছে। জানার বিষয় হল, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় খালিদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে কি না?

উত্তর:

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী খালিদ মীরাস সূত্রে ১.৫ শতাংশ জমির মালিক হয়েছে তা যেহেতু তার প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ এবং তার মূল্যও নেসাব পরিমাণের বেশি (অর্থাৎ প্রায় এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকা) তাই তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৮৬; রদ্দুল মুহতার ২/৩৩৯

প্রকাশ থাকে যে, মায়ের সম্পত্তি তার ছেলেমেয়ের মাঝে সমানহারে বণ্টন করা বৈধ হয়নি। কুরআন মজীদের হুকুম হল, মেয়ের তুলনায় ছেলে দ্বিগুণ মীরাসের হকদার।-সূরা নিসা ৪ : ১১

২১৬৪. প্রশ্ন

আমি একজন চাকরিজীবি। গত কুরবানীর সময় আমার বেতনের ৩০ হাজার টাকা আমার প্রতিষ্ঠানের নিকট বকেয়া ছিল। কুরবানীর সময় আমার নিকট কুরবানী দেওয়ার মতো কোনো নগদ অর্থ বা অন্য কোনো সম্পদ ছিল না। তখন আমি একজন আলেমের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলাম। তিনি আমাকে বললেন, উক্ত বকেয়া বেতনের কারণে আমার উপর কুরবানী ওয়াজিব। কিন্তু তারপরও তখন আমার নিকট টাকা না থাকার কারণে আমি কুরবানী করিনি।

এখন জানার বিষয় এই যে, উক্ত বকেয়া বেতনের কারণে কি আমার উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল? ওয়াজিব হয়ে থাকলে গত কুরবানীর সময় কুরবানী না করার কারণে আমার কি গুনাহ হয়েছে? বর্তমানে আমার করণীয় কি? আশা করি, সঠিক বিষয়টি জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার বেতনের বকেয়া ৩০ হাজার টাকার কারণে আপনার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়নি। উক্ত বেতন উসূল হওয়ার পর থেকেই কেবল তার উপর যাকাত-কুরবানী ইত্যাদি বিধান প্রযোজ্য হবে। উসূলের আগে নয়। অতএব বিগত কুরবানীর সময় কুরবানী না করার করারণে আপনি গুনাগার হবেন না। উল্লেখ্য যে, বেতন উসূল হওয়ার আগ পর্যন্ত তা কর্মচারীর একটি হক তথা প্রাপ্য হিসেবে গণ্য হয়। তাতে কর্মচারীর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় না। আর যাকাত-কুরবানী ইত্যাদির সম্পর্ক মালিকানার সাথেহক্বের সাথে নয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৯, ৪/৬১; মাবসূত, সারাখসী ২/১৯৬; হেদায়া ৩/২৭৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৮, ৭/৩০০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৬; রদ্দুল মুহতার ৬/১০; জাদীদ মাসায়েল কে শরঈ আহকাম, মুফতী শফী রাহ. ৬৪-৬৫

৪১৫১. প্রশ্ন

আমি একজন সাধারণ ব্যবসায়ী। আমার উপর কোনো বছর যাকাত ফরয হয় আবার কোনো বছর ফরয হয় না। কিন্তু আমি প্রতি বছর কুরবানী করি। আমাকে একজন বললেন, যে বছর আপনার উপর যাকাত ফরয হয় না সে বছর আপনার কুরবানী করা লাগবে না। এখানে আমার প্রশ্ন হল, ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক কি না? আর বাস্তবে কতটুকু সম্পদ থাকলে কুরবানী ওয়াজিব হয়? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব

উত্তর

ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। কারণ যাকাত ও কুরবানী দুটো পৃথক পৃথক ইবাদত এবং উভয়ের ওয়াজিব হওয়ার কারণও ভিন্ন। একটি ফরয না হয়ে থাকলে অপরটিও হয় না এমন ধারণা ঠিক নয়। বরং যাকাত ফরয হয় কেবল টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা ও ব্যবসায়িক পণ্যের উপর। আর কারো কাছে কুরবানীর দিনগুলোতে টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা ও ব্যবসায়িক পণ্য ছাড়াও সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য পরিমাণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে কোনো সম্পদ থাকলেই তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। অর্থাৎ কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা ও ব্যবসায়িক পণ্যের সাথে সাথে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত সকল আসবাবপত্র হিসাবযোগ্য। অথচ যাকাতের ক্ষেত্রে এগুলো হিসাবযোগ্য নয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ৬/২৮০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯২

২০৮৯. প্রশ্ন

আমরা জানি যে, কারো নিকট প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত (১ বছর অতিক্রম হলে) ও কুরবানী ওয়াজিব। এখন আমার জানার বিষয় হল, আমার এমন অনেক আত্মীয়স্বজন আছেন, যারা বাহ্যত গরীব। কষ্ট করে সংসার চলে। কিন্তু তারা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে যেমন মেয়ের বিবাহ দেওয়া, ঘরবাড়ি বানানো ইত্যাদির জন্য বিভিন্ন বীমা ও ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে টাকা জমা দিয়ে আসছেন। যা ইতোমধ্যেই নিসাব পরিমাণ হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, এই টাকা কিন্তু বর্তমানে তাদের প্রয়োজন অতিরিক্ত। এমতাবস্থায় তাদের উপর কুরবানী ও যাকাত ওয়াজিব হবে কি না এবং তাদের জন্য যাকাতের মাল খাওয়া বৈধ হবে কি না? সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

জমা টাকা নেসাব পরিমাণ হলে তা যে উদ্দেশ্যেই রাখা হোক তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে এবং বছরান্তে উক্ত সম্পদের যাকাতও দিতে হবে। এমন ব্যক্তি যাকাত গ্রহণ করতে পারবে না। উল্লেখ্য, প্রচলিত বীমা কোম্পানিগুলোর লেনদেন সুদ ও জুয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই এতে অংশগ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম।

মাবসূত সারাখসী ২/১৮৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৫৬, ৮/৪৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৯, ৬/৩১২

 ২২৩১. প্রশ্ন

আমার বাসার ড্রয়িংরুমে শো কেসে সৌন্দর্যের জন্য কাঁচের প্লেট, জগ ও গ্লাস ইত্যাদি কিছু সামান রাখা আছে। এগুলোর মূল্য নেসাব পরিমাণ এবং পুরো বছরে কোনো দিন ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। জানতে চাই, এগুলোর যাকাত দিতে হবে কি?

উত্তর

না, ঐগুলোর যাকাত দিতে হবে না। ব্যবহারিক আসবাব প্রয়োজন অতিরিক্ত হলেও তার উপর যাকাত আসে না। তবে কুরবানী এবং সাদাকাতুল ফিতরের নেসাবের ক্ষেত্রে এগুলোর মূল্য ধর্তব্য হবে।

-কিতাবুল আসল ২/৯৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯১-৯২

৩১০৮. প্রশ্ন

আমার কাছে একটি জমি আছে। ঐ জমির উপার্জন দ্বারা আমার এবং আমার পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। জানার বিষয় হল, ঐ জমির কারণে কি আমার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে?

উত্তর

না, উক্ত জমির কারণে আপনার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে না। কেননা তা আপনার প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়; বরং এর আয়ের উপর আপনার পরিবারের খরচ নির্ভরশীল। তাই কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে তা ধর্তব্য হবে না।

-রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২; আলবিনায়াহ ১৪/৩৫০; ফাতাওয়া খানিয়া ৬/২৮৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৬; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪০৯

৩৪৬৯. প্রশ্ন:

আমরা তিন ভাই। মা জীবিত আছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বণ্টন করা হয়নি। অবশ্য বাবা খুব বেশি সম্পত্তি রেখে যাননি। আমরা তিন ভাই চাকুরি করি। প্রত্যেকের নিজস্ব কিছু কিছু সম্পদ আছে। কুরবানীর সময় আমরা তিনভাই মিলে মায়ের নামে একটি ছাগল কুরবানী করে থাকি। আমি জানতে চাই, এভাবে আমাদের কুরবানী করা সহীহ হচ্ছে কি না?

উত্তর:

আপনার বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বণ্টন করলে আপনারা প্রত্যেকে যে পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হবেন তার সাথে প্রত্যেকের নিজস্ব মালিকানাধীন সম্পত্তি যোগ করলে যার মালিকানায় মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্য সমপরিমাণ সোনা-রূপা, টাকা পয়সা বা অন্যান্য সম্পত্তি থাকবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। সে হিসেবে যার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে তাকে পৃথকভাবে অন্তত: একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা অথবা বড় পশুতে এক সপ্তমাংশে শরীক হয়ে নিজের কুরবানী আদায় করতে হবে। কয়েক ভাই মিলে মায়ের নামে ছাগল কুরবানী করার দ্বারা আপনাদের ওয়াজিব কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য যদি আপনাদের কারো উপরোক্ত পরিমাণে সম্পদ না থাকে সেক্ষেত্রে কুরবানী ওয়াজিব হবে না। কেউ করলে তা নফল হিসাবে আদায় হবে।

-ফাতওয়া হিন্দিয়া ১/১৮১; এলাউস সুনান ১৭/২১০

প্রশ্ন:

স্বামীর নিকট স্ত্রী মোহরের কিছু টাকা পাবে। কিছু টাকা নগদ আদায় করেছে। যে টাকা বাকী আছে তার পরিমাণ কুরবানীর নেসাবের চেয়ে অধিক। স্বামী এ টাকা এ বছর কুরবানীর আগে দিতে পারছে না। বরং সামনের বছর আদায় করবে বলে সম্ভাবনা রয়েছে।

এখন এ মহিলার উপর কি ঐ পাওনা টাকার কারণে এ বছর কুরবানী ওয়াজিব হবে? প্রকাশ থাকে যে, স্ত্রীর কাছে এছাড়া কোনো নগদ টাকা বা স্বর্ণ বা অন্য কোনো সম্পদ নেই।

উত্তর:

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ মহিলার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। কেননা তার কাছে কোনো সম্পদই নেই। আর সে যে মহর পাবে সে কারণেও তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। কারণ, মহরের টাকা হস্তগত হওয়ার আগে তাতে স্ত্রীর পূর্ণ মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় না। সুতরাং ভবিষ্যতে মোহর পাবে এ কারণে স্ত্রীর উপর এখন কুরবানী ওয়াজিব হবেনা

-রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯২

৪৭১১. প্রশ্ন

আমি ভার্সিটির ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করি। টিউশনি থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে প্রয়োজন পূর্ণ করার পর অবশিষ্ট টাকা ব্যাংকে জমা করি। এভাবে ৫০ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা হয়েছে। তিন মাস আগে মামার একটি বিপদে সে টাকাগুলো তাকে ঋণ দিয়েছি। বর্তমানে আমার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো সম্পদ নেই। কুরবানীর আগের জুমায় খতীব সাহেব মাসআলা বলেছেন, কেউ যদি ৪০ হাজার টাকা বা সে পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। তার কাছে যদি নগদ টাকা না থাকে তাহলে কিছু সম্পদ বিক্রি করে বা ঋণ নিয়ে হলেও কুরবানী দিতে হবে।

প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় আমার উপর কি কুরবানী ওয়াজিব? খতীব সাহেবের কথা অনুযায়ী আমাকে ঋণ নিয়ে কুরবানী করতে হবে? দ্রুত মাসআলাটির সমাধান জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার কর্তব্য মামার কাছ থেকে এ পরিমাণ টাকা ফেরত চাওয়া যা দিয়ে আপনি একটি কুরবানী আদায় করতে পারবেন। যদি তিনি তা দেন তাহলে তা দিয়ে কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। আর যদি তিনি তা না দেন আর আপনার কাছে কোনো জায়গা থেকে কুরবানীর সমপরিমাণ টাকা হস্তগতও না হয় তাহলে কুরবানীর শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। শেষ পর্যন্ত যদি কুরবানী দেওয়ার মত কোনো সম্পদ আপনার হাতে না থাকে তাহলে আপনাকে ঋণ নিয়ে কুরবানী করতে হবে না। কেননা এক্ষেত্রে আপনার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। খতীব সাহেব যে মাসআলা বলেছেন তা প্রয়োজন অতিরিক্ত অন্য সম্পদ থাকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬; ফাতাওয়া বাযযাযিয়াহ ৬/২৮৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৬৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬

২৯৬৩ . প্রশ্ন:

আমার আববু কুরবানীর পশু ঈদের আগের দিন ক্রয় করেন। গত বছর ঈদের দুদিন আগে আমাদের বাসায় ডাকাতি হয়। তাই আববু গত বছর কুরবানী দিতে পারেননি। তবে তখন আববুর হাতে নগদ টাকা না থাকলেও বাড়িতে দেড় বিঘা জমি আছে, যা থেকে বাৎসরিক আয় আসে বিশ হাজার টাকা। ঐ বিশ হাজার টাকা না হলেও আমাদের সংসার ভালোভাবেই চলে যায়। গত বছর কি আববুর উপর কুরবানী করা ওয়াজিব ছিল? যদি হয়ে থাকে তাহলে এখন কী করবে?

উত্তর:

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ দেড় বিঘা জমির আয় না হলেও যেহেতু আপনাদের সংসার চলে যায় তাই ঐ দেড় বিঘা জমি প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ। এ সম্পদের কারণে আপনার পিতার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। কিন্তু তিনি যেহেতু গত বছর কুরবানী করেননি তাই ঐ বছরের জন্য নূন্যতম এক বছর বয়সী একটি ছাগল বা তার মূল্য সদকা করে দিতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১২; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৬

৪৭৭৬. প্রশ্ন

আমার আম্মা প্রগতি লাইফ ইনসিওরেন্স দশ বছর মেয়াদী একটি বীমা করেন। মাসে ২০০ টাকা করে দশ বছরে ২৪০০০ টাকা জমা হয়। ইনসিওরেন্স কোম্পানি এ টাকার সাথে আরোও ১৬০০০ টাকা মিলিয়ে মোট ৪০০০০ টাকা দিয়েছে। যা একটি ব্যাংক একাউন্টে রয়েছে। তিনি এখন জানতে চাচ্ছেন যে, তার এ টাকার উপরে কুরবানী ওয়াজিব হবে কি না? কেউ কেউ বলেছে, ইনসিওরেন্স ডিভিডেন্ড হারাম। তাই তার উপর কুরবানী আসবে না। আবার কেউ বলেছে, যেহেতু অধিকাংশ টাকা হালাল, তাই এর উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। সঠিক মাসআলাটি জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ইনসিওরেন্স কোম্পানি মূল জমার অতিরিক্ত যে টাকা দিয়েছে তা সম্পূর্ণ হারাম। আর হারাম টাকা নেসাবের অন্তর্ভুক্ত হয় না। এবং সে টাকার উপর কুরবানীও ওয়াজিব হয় না। বরং হারাম টাকা পুরোটাই সদকাযোগ্য। অতএব আপনার মায়ের জমাকৃত ২৪,০০০ টাকা ছাড়া তার নিকট যদি অন্য কোনো সম্পদ না থাকে তাহলে এ টাকার কারণে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে না।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২৩৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৫; রদ্দুল মুহতার ২/২৯১; আততাকরীরুল মুখতার, রাফেয়ী ২/১৩৩

১৯৫৬. প্রশ্ন

জনৈকা মহিলার কাছে ৩ ভরি স্বর্ণালংকার আছে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু কাপড় আছে, যার মূল্য আনুমানিক পাঁচ হাজার টাকা। সে ঋণগ্রস্থও নয়। তার উপর কি কুরবানী ওয়াজিব হবে? খ) কুরবানীর পশুকে জবাই করার জন্য শোয়ানোর সময় তার মাথা কোন দিকে থাকবে? উত্তর দিকে নাকি দক্ষিণ দিকে এবং পশুর পা কোন দিকে থাকবে? পূর্ব দিকে নাকি পশ্চিম দিকে?

উত্তর

ঐ মহিলার উপর কুরবানী ওয়াজিব। কারণ তার নিকট বিদ্যমান স্বর্ণ ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাপড়ের মূল্য এক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। যা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের চেয়ে বেশি। অতএব নেসবা পূর্ণ হওয়ায় তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৮, ২০৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯১; হেদায়া ১/২০৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৭; ফাতহুল কাদীর ২/২১৮ খ) পশুকে জবাই করার সময় মাথা দক্ষিণ দিকে ও সীনা কিবলামুখী থাকবে। এতে পা পশ্চিম দিকে থাকবে। এভাবে শোয়ানো উত্তম।-উমদাতুল কারী ২১/১৫৭; ফাতহুল বারী ১০/২১; ইলাউস সুনান ১৭/১০০

৪৩৯৬. প্রশ্ন

আমরা তিন ভাইয়ের দুই জন চাকরিজীবী এবং সচ্ছল। আর আমি পড়ালেখা করছি। আমার এক বিবাহিতা বোন আছে। তার পরিবারও সচ্ছল। আমার পিতা নিজের পক্ষ হতে সকলের ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে চান। শরীয়তে কি এর অনুমতি আছে?

উত্তর

হ্যাঁ, আপনার পিতা আপনাদের পক্ষ হতে কুরবানী করলে তা সহীহ হবে এবং আপনাদের ওয়াজিব কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। আমাদের সমাজে পিতা কর্তৃক সন্তানদের কুরবানী ও ফিতরা দিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। তাই এক্ষেত্রে ভিন্ন করে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে যদি কোনো এলাকায় এমন রেওয়াজ না থাকে এবং সন্তান পিতার সাথে একান্নভুক্তও না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে পিতা সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানী করলে সন্তানের অনুমতি নিয়ে নিবেন বা সন্তানদের অবগত করবেন। এতেই সকলের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৩; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/২৯৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৫

প্রশ্ন:

প্রতি বছর আমরা ছয় ভাই একটি গরু কুরবানী করি। একটি গরুতে যেহেতু সাতজন শরিক হতে পারে তাই এবার আমরা পশুর ৭ম ভাগটি ইছালে ছওয়াবের উদ্দেশে মৃত পিতার পক্ষ থেকে কুরবানী দিতে চাচ্ছি। এভাবে মৃত পিতার পক্ষ থেকে কুরবানী করলে তা সহীহ হবে কি এবং ঐ অংশের গোশত কি আমরা খেতে পারব?


উত্তর:

হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ৬ জন মিলে ৭ম অংশ পিতার পক্ষ থেকে কুরবানী করলে তা সহীহ হবে এবং আপনারা ঐ অংশের গোশত খেতে পারবেন। তবে এটি উত্তম পদ্ধতি নয়। এক্ষেত্রে উত্তম হল, সবাই মিলে এক অংশের টাকা এক ভাইকে মালিক বানিয়ে দিবে। আর ঐ ভাই পিতার পক্ষ থেকে কুরবানী করবে। এতে কাজটি নিয়মসম্মত হবে এবং সকলে সওয়াবও পেয়ে যাবে। আর এ অবস্থায়ও মৃত পিতার পক্ষ থেকে দেওয়া অংশের গোশত কুরবানীদাতার হবে। সে তা নিজেও খেতে পারবে, সদকাও করবে পারবে এবং অন্য শরিককে হাদিয়াও দিতে পারবে।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৮

প্রশ্ন:

আমার পিতা গত বছর ইন্তেকাল করেছেন। আমি তার নামে কুরবানী করার নিয়ত করেছি। প্রশ্ন হল, মৃত ব্যক্তির নামে দেওয়া কুরবানীর গোশত কী করতে হবে? তার অংশের পুরো গোশতই কি সদকা করতে হবে, নাকি নিজেরাও তা খেতে পারব? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর:

মৃত ব্যক্তি যদি কুরবানীর জন্য ওসিয়ত না করে থাকে তবে তার পক্ষ থেকে দেওয়া কুরবানীর গোশতের হুকুম সাধারণ কুরবানীর মতো; নিজেরাও খেতে পারবে অন্যদেরকেও দিতে পারবে। পুরোটা সদকা করা জরুরি নয়। তবে মৃত ব্যক্তি যদি অসিয়ত করে যায় এবং তার সম্পদ দ্বারাই কুরবানী করা হয়ে থাকে তাহলে এ কুরবানীর পুরো গোশত সদকা করা জরুরি। এ থেকে নিজেদের খাওয়া জায়েয হবে না।

-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৩; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৩৫

প্রশ্ন:

আমরা সহোদর তিনভাই মিলে প্রতি বছর একটি গরু কুরবানী করি। বড় ভাই এক ভাগ আর আমরা দুই ভাই তিন অংশ করে মোট ছয় ভাগ নিয়েছি। আমরা দুই ভাই সমান সমান টাকা দিয়ে অংশগ্রহণ করি। কিন্তু বড়ভাই আমাদের মধ্যে তুলনামূলক অসচ্ছল হওয়ায় তিনি তার অংশের পুরো টাকা দেন না। আমরা দুই ভাই বলেছি, আপনি যা পারেন দেন, বাকিটা আমরা দুজনে দিয়ে দিব। অবশ্য গোশত সকলের অংশ হারেই বণ্টন করা হয়। টাকা কম-বেশির কারণে তাতে ব্যবধান করা হয় না; বরং ধরে নেওয়া হয় যে, আমরা ছোট দুই ভাই বড় ভাইয়ের টাকার আংশিক আদায় করে দিই।

জানতে চাই, উল্লেখিত পদ্ধতিতে আমাদের কুরবানী কি সহীহ হচ্ছে?

উত্তর:

হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের কুরবানী সহীহ হয়েছে। গরু-মহিষে শরিকে কুরবানী দেওয়ার জন্য শর্ত হল, কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম না হওয়া। প্রশ্নোক্ত অবস্থায় বড় ভাই যদিও তার অংশের চেয়ে কম দিচ্ছেন কিন্তু অন্য দুই ভাই তার অংশের বাকিটা দিয়ে দিবেন বলে উল্লেখ করেছেন। তাই বড় ভাইয়ের অংশ এক সপ্তমাংশের কম হয় না।

-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৮

৩৪৯৬. প্রশ্ন:

প্রতি বছর আমরা নির্দিষ্ট পাঁচ শরিক মিলে কুরবানী করি। এ বছরও কুরবানীর এক সপ্তাহ আগে ৫জন মিলে একটি গরু ক্রয় করি। কুরবানীর আগের দিন আমাদের এক প্রতিবেশী তাতে শরিক হতে চাইলে আমরা তাকে শরিক করে নিই। জানার বিষয় হল, এভাবে শরিক করার কারণে আমাদের কুরবানী আদায়ে কোনো ত্রæটি হয়েছে কি না? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর:

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় সকলের কুরবানী সহীহ হয়েছে। তবে পাঁচ জনে মিলে কুরবানী দেওয়ার নিয়তে পশু ক্রয়ের পর নতুন করে শরিক নেওয়া অনুত্তম হয়েছে। এক্ষেত্রে ঐ শরিক থেকে প্রাপ্য টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪১৭; মাবসূত, সারাখসী ১২/১৫

৩৪৬৮. প্রশ্ন:

কুরবানীর সময় আমাদের এলাকার অনেককেই এমন করতে দেখা যায়, ৬ শরীক মিলে একটি পশু কুরবানী করে। ঐ পশুতে নিজেদের ৬ অংশ রাখে আর ৭ম অংশ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য রাখে। এ ৭ম অংশের টাকা তারা সকলে মিলে দিয়ে থাকে। আমি জানতে চাই, এমনটি করা সহীহ কী না?

উত্তর:

প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা সহীহ। কেননা এ ক্ষেত্রে কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম নয়। প্রত্যেকের অংশ প পুরো হওয়ার পর সপ্তমাংশ শরীকদের নফল কুরবানী হিসাবে গণ্য হবে এবং সকলের কুরবানী সহীহ হয়ে যাবে।

বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৬

৩৪৭০. প্রশ্ন:

আমাদের এলাকার সাধারণ লোকজন মনে করে, একটা গরু বা একটা মহিষে কুরবানী আকীকা ইত্যাদি সাত ভাগই করা লাগে। সাত ভাগের কম হলে কুরবানী সহীহ হয় না। তাই তারা কখনো পশুতে শরীক কম হয়ে গেলে বাকি অংশগুলো তাদের মৃত আত্মীয়-স্বজনের নামে দিয়ে সাত ভাগ পূর্ণ করে থাকে।

এখন আমার জানার বিষয় হল, তাদের উক্ত ধারণা কি সঠিক? একটি পশুতে কি সাত ভাগই পূর্ণ করা লাগে এবং মৃত ব্যক্তির জন্য ইসালে সাওয়াবের নিয়তে কুরবানী করা যাবে কি? করা জায়েয হলে এ ভাগের গোশত কি সদকা করে দিতে হবে?

উত্তর:

প্রশ্নোক্ত ধারণাটি ঠিক নয়। গরু, মহিষ এ ধরনের পশু সাত ভাগে এবং তার কম যে কোনো অংশে কুরবানী বা আকীকা ইত্যাদি করা জায়েয। তবে কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম না হতে হবে। এক সপ্তমাংশের কম হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। আর এ ধরনের পশুতে মৃত ব্যক্তির জন্যও ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে অংশ নেওয়া যাবে এবং এই অংশ সদকা করা জরুরি নয়। বরং এর হুকুম নিজের সাধারণ কুরবানীর মতই। তা থেকে নিজেরাও খেতে পারবে এবং সদকাও করতে পারবে।

বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৭৪,৮৭৪; রদ্দুল মুহতার ৬/২৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫৩১, ৩১৬, ৩৩৫

কুরবানীর শরীক সংখ্যা কি বেজোড় হওয়া জরুরি?

কিছু লোককে বলতে শোনা গেছে, যে পশুতে সাতজন শরীক হতে পারে তাতে শরীকের সংখ্যা বেজোড় হওয়া জরুরি। সুতরাং একটি গরুতে এক, তিন, পাঁচ বা সাতজন শরীক হতে পারবে। দুই, চার বা ছয়জন শরীক হতে পারবে না।

এটা বিলকুল গলত কথা। একটি গরু যেমন এক ব্যক্তি একা কুরবানী করতে পারে তেমনি দুই থেকে সাত পর্যন্ত যে কোনো সংখ্যক শরীক একত্র হয়েও কুরবানী করতে পারে। এতে কোনো বাধা নেই। তেমনি শরীকের সংখ্যা জোড় না হয়ে বেজোড় হওয়ার মাঝেও এমন আলাদা কোনো ফযীলত নেই, যার কারণে পাঁচ শরীকের স্থলে ছয় শরীক বা ছয় শরীকের স্থলে সাত শরীক একত্র হয়ে কুরবানী করতে উৎসাহ দেওয়া যায়।

২০৭৬ . প্রশ্ন:

আমাদের গ্রামে কুরবানীর গরুতে সাত ভাগের এক ভাগ তিন/চার জন গরীব ব্যক্তি মিলে দিয়ে থাকে। তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। শুনেছি, যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় তারা নাকি এভাবে কুরবানীর পশুতে শরীক হতে পারে। সঠিক মাসআলা জানতে চাই।

উত্তর:

আপনার শোনা কথাটি ঠিক নয়। এক গরুতে সাত জনের বেশি শরীক হওয়া বৈধ নয়। সাত জনের বেশি শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। চাই অংশিদারগণ গরীব হোক বা ধনী। তাই কুরবানীর পশুতে ঐভাবে শরীক নেওয়া যাবে না। একান্ত কখনো এমন করতে চাইলে এক ভাগের সকল অংশিদারগণ একজনকে মালিক বানিয়ে দিবে। অতপর ঐ ব্যক্তি নিজের পক্ষ থেকে ঐ অংশ কুরবানী দিবে। গোশত পাওয়ার পর অংশিদারদের মধ্যে গোশত বণ্টন করে দিতে পারবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৬; মাজমাউল আনহুর ৪/১৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৫; মাবসূত সারাখসী ১২/১২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫


৪৩১৬. প্রশ্ন

এ বছর আমরা দুই ভাই মিলে একটি গরু কুরবানী করার ইচ্ছা করেছি। তবে দুইজনের অংশ সমান নয়। একজনের সাড়ে তিন অংশ অপরজনের আড়াই অংশ। জানতে চাই, এমন অসমান শরীকানায় আমরা কুরবানী করতে পারব কি না?

উত্তর

হ্যাঁ, এভাবে আপনারা কুরবানী করতে পারবেন। কুরবানীর পশুতে সকলের অংশ সমান হওয়া আবশ্যক নয়। তবে কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হওয়া জায়েয নয়। আর এক সপ্তমাংশের বেশি তা জোড়-বেজোড় বা ভগ্নাংশ যে কোনো পরিমাণেই হোক তাতে কোনো সমস্যা নেই। কুরবানী সহীহ হয়ে যাবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০

৩০০৪. প্রশ্ন

খালেদ এবং তার ছোট চার ভাই মোট পাঁচ জন মিলে প্রতিবছরই একটি গরু কুরবানী করে থাকে। খালেদ বলছে, কুরবানীর পশুর অর্ধেক মূল্য সে একাই দেয়। আর বাকি অর্ধেক মূল্য বাকি চারজন মিলে পরিশোধ করে। যার ফলে বাকি চারজনকে পূর্ণ এক সপ্তমাংশের কম মূল্য আদায় করতে হয়। খালেদ টাকা বেশি দিলেও গোশত বেশি দাবি করে না। সকলের মাঝে সমান বণ্টনই হয়। বরং এক ভাইয়ের পরিবারের সদস্য বেশি বিধায় তাকে সবচেয়ে বেশি গোশত দেওয়া হয়। এখন জানতে চাই এভাবে কুরবানী করা কি সহীহ হবে?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, যিনি টাকা বেশি দেন তিনি অন্য ভাইদের অংশের অবশিষ্ট টাকা নিজ থেকে পরিশোধ করে দেন তাই এমনটি হলে তাদের সকলের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে।

তবে এক্ষেত্রে যদি প্রত্যেকের টাকা অনুযায়ী অংশ বণ্টন করা এবং সে অনুপাতে গোশত নেওয়া উদ্দেশ্য হয় তাহলে কারো কুরবানীই সহীহ হবে না। কারণ এক্ষেত্রে চারজনের প্রত্যেকের অংশ পশুর এক সপ্তমাংশের কম হয়ে যায়।

-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮

৪৯৭৫. প্রশ্ন

কুরবানী ঈদের দুদিন আগে আমার ছেলে ভূমিষ্ঠ হয়। ঈদের দিন কুরবানীর সঙ্গে তার আকীকা আদায় করি। এক লোক বললেন, ‘আমার এই আকীকা আদায় সহীহ হয়নি। কেননা আকীকা করতে হয় বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাত দিন পর। এর আগে করলে আদায় হয় না।’ তার এই কথা কি ঠিক?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। আপনার শিশুর উক্ত আকীকা সহীহ হয়েছে। সপ্তম দিনের আগেও আকীকা করা জায়েয। যদিও মুস্তাহাব হল সপ্তম দিনে করা। অর্থাৎ এখানে দুটি সুন্নত। ১. আকীকা করা। ২. সপ্তম দিনে করা। এক্ষেত্রে আপনার আকীকার মূল সুন্নতটি আদায় হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় সুন্নতটি আদায় হয়নি।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২৪৭৩৯; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামিদিয়্যা ২/২৩৩; এলাউস সুনান ১৭/১১৯

১৯৮৩. প্রশ্ন

কোনো ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়নি। কিন্তু সে কুরবানীর দিন আকীকা দিতে চায়। তার জন্য আকীকা দেওয়া বৈধ হবে কি না? একজন আলিম বলেছেন, কুরবানীর দিনের ভিতর আকীকা দেওয়া এমন ব্যক্তির জন্য বৈধ নয়। প্রমাণসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

কুরবানীর দিন আকীকা করা নিষিদ্ধ নয়। এমনকি কুরবানীর পশুতেও আকীকার অংশ দেওয়া জায়েয। অতএব কুরবানী ওয়াজিব নয় এমন ব্যক্তিও কুরবানীর দিনগুলিতে আকীকা করতে পারবে। বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬

প্রশ্ন:

কেউ যদি একটি গরুতে একভাগ আকীকা আর বাকি অংশ কুরবানীর নিয়তে কুরবানী করে তবে তার আকীকা ও কুরবানী আদায় হবে কি না?

উত্তর:

হ্যাঁ, গরু, উট, মহিষে সাত ভাগের এক ভাগ আকীকা ও বাকি অংশ কুরবানীর নিয়ত করলে আকীকা ও কুরবানী দু’টোই আদায় হয়ে যাবে।

-রদ্দুল মুহতার ২/৫৪৩, ৬/৩২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৪; ইমদাদুল আহকাম ৪/২৮২

৩৯০৬. প্রশ্ন

আমরা তিনজনে সমান টাকা দিয়ে একটি গরু কিনে কুরবানী দিই। এক ভাই বললেন আমাদের কুরবানী আদায় হয়নি। কারণ হিসাবে তিনি বললেন সপ্তম ভাগটিতে আমরা তিনজনই শরীক। আর কোনো ভাগে একাধিক ব্যক্তির অংশ থাকলে কুরবানী সহীহ হয় না। তাই আপনাদের কুরবানীও আদায় হয়নি। লোকটির কথা কি ঠিক? আসলেই কি আমাদের কুরবানী আদায় হয়নি?

উত্তর

আপনাদের কুরবানী সহীহ হয়েছে। লোকটির কথা ঠিক নয়। গরু, মহিষ, উটে এক সপ্তমাংশ বা তার বেশি একাধিক অংশ জোড় বেজোড় বা ভগ্নাংশেও কুরবানী দেওয়া জায়েয আছে। যেমন প্রশ্নোক্ত অবস্থায় প্রত্যেকের অংশ হয়- ২.৩৩ অংশ করে। এভাবে দেড়, আড়াই বা কমবেশী অংশ দেওয়াও জায়েয হবে। শুধু শর্ত হল কোনো শরীকের অংশ এক সপ্তমাংশের কম না হওয়া।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/১৭৪; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৫৩

 

৩৭৬৪. প্রশ্ন

আলহামদু লিল্লাহ! আল্লাহ আমাকে যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ দান করেছেন। প্রতি বছর একাই একটি গরু কুরবানী দেওয়ার তাওফীক হয়। গত কুরবানীর ঈদে একাই কুরবানী দেওয়ার উদ্দেশ্যে একটি গরু ক্রয় করি। আমার এক চাচা বললেন, তোমার গরুটা যেহেতু বড়। তাই আলাদাভবে গরু কিনতে চাচ্ছি না। তোমার গরুর দুই ভাগ আমি নিতে চাচ্ছি। যা মূল্য হয় দিয়ে দেব। তখন আমি চাচাকে শরিক বানিয়ে নিই। মূল্য নিতে না চাইলেও জোর করে দিয়ে দেয়। প্রশ্ন হল, পশু ক্রয়ের পর কাউকে শরিক বানানো জায়েয আছে কি না এবং আমাদের উক্ত কুরবানী সহীহ হয়েছে কি না?

উত্তর

ভাগে কুরবানী দিতে চাইলে পশু ক্রয়ের সময়ই অন্যকে শরিক নেওয়ার নিয়ত করা উচিত। পশু ক্রয়ের সময় অন্যকে শরিক বানানোর নিয়ত না থাকলে ক্রয়ের পর কাউকে শরিক বানানো মাকরূহ। অবশ্য কাজটা মাকরূহ হলেও এক্ষেত্রেও সকল শরিকের কুরবানী সহীহ হয়ে যাবে।

ক্রয়ের সময় শরিক নেওয়ার নিয়ত না থাকলে অন্যকে শরিক করলে শরিক থেকে প্রাপ্ত টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম হবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার চাচাকে শরিক বানানো মাকরূহ হলেও কুরবানী সহীহ হয়ে গেছে। তবে তার কাছ থেকে প্রাপ্ত টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম হবে।

-কিতাবুল আছল ৫/৪০৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৫১; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭

২৪১০. প্রশ্ন

আমরা তিনজন মিলে একটি গরু কুরবানী করেছি। গরুটির মূল্য সত্তর হাজার টাকা। মূল্যের আড়াই ভাগ টাকা আমি দিয়েছি। আড়াই ভাগ টাকা আমার বড় ভাই দিয়েছেন। বাকি দুই ভাগ টাকা আমার এক বন্ধু দিয়েছে। গোশত আমরা টাকা অনুপাতে ভাগ করে নিয়েছি। জানতে চাই, আমাদের কুরবানী কি সহীহ হয়েছে? এক ব্যক্তি বলেছে, ভগ্নাংশের কারণে আমাদের কুরবানী নাকি হয়নি।

উত্তর

কুরবানীর পশুতে এক সপ্তমাংশ বা এর অধিক অংশে অংশীদার হওয়া জায়েয। এক্ষেত্রে ভগ্নাংশ (যেমন-দেড় ভাগ, আড়াই ভাগ, সাড়ে তিন ভাগ) হলেও বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী কুরবানী সহীহ হয়ে যায়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনাদের কুরবানী সহীহ হয়েছে। ভগ্নাংশের কারণে কুরবানীর ক্ষতি হয়নি।

উল্লেখ্য যে, ভগ্নাংশ যদি এক সপ্তমাংশের কম হয় যেমন কোনো শরিকের আট ভাগের এক ভাগ হয় তাহলে সেক্ষেত্রে কারো কুরবানীই সহীহ হবে না।

-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৫৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৪

৩৯০৬. প্রশ্ন

আমরা তিনজনে সমান টাকা দিয়ে একটি গরু কিনে কুরবানী দিই। এক ভাই বললেন আমাদের কুরবানী আদায় হয়নি। কারণ হিসাবে তিনি বললেন সপ্তম ভাগটিতে আমরা তিনজনই শরীক। আর কোনো ভাগে একাধিক ব্যক্তির অংশ থাকলে কুরবানী সহীহ হয় না। তাই আপনাদের কুরবানীও আদায় হয়নি। লোকটির কথা কি ঠিক? আসলেই কি আমাদের কুরবানী আদায় হয়নি?

উত্তর

আপনাদের কুরবানী সহীহ হয়েছে। লোকটির কথা ঠিক নয়। গরু, মহিষ, উটে এক সপ্তমাংশ বা তার বেশি একাধিক অংশ জোড় বেজোড় বা ভগ্নাংশেও কুরবানী দেওয়া জায়েয আছে। যেমন প্রশ্নোক্ত অবস্থায় প্রত্যেকের অংশ হয়- ২.৩৩ অংশ করে। এভাবে দেড়, আড়াই বা কমবেশী অংশ দেওয়াও জায়েয হবে। শুধু শর্ত হল কোনো শরীকের অংশ এক সপ্তমাংশের কম না হওয়া।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/১৭৪; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৫৩

৪৮২৫. প্রশ্ন

কুরবানী প্রসঙ্গে একটি মাসআলার সমাধান জানানোর আবেদন।

মুহতারাম, আমরা জানতাম, কুরবানীর পশুতে কোনো শরীকের অংশ এক সপ্তমাংশের কম হলে সকল শরীকের কুরবানীই নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের এলাকায় একজন মুফতী সাহেব এমন একটি ঘটনায় ফতোয়া দিয়েছেন যে, শুধু ঐ শরীকের কুরবানীই নষ্ট হবে। অন্য শরীকের কুরবানী সহীহ হয়ে যাবে।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, অন্য শরীকদের কুরবানী কেবল ঐ ক্ষেত্রেই নষ্ট হয়, যেক্ষেত্রে কোনো শরীক হারাম মাল দ্বারা কুরবানী করে অথবা দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে শরীক হয়।

এ ফতোয়াটি আমাদের কাছে সঠিক মনে হচ্ছে না। মুফতী সাহেবের কাছে বিনীত নিবেদন, হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য কিতাবাদির হাওয়ালাসহ মাসআলাটির সঠিক সমাধান জানাবেন।

উত্তর

কুরবানীর পশুতে কোনো শরীকের অংশ এক সপ্তমাংশের কম হলে কোনো শরীকের কুরবানী সহীহ হবে না। কারণ কারও অংশ এক সপ্তমাংশের কম হলে সেটি কুরবানীর হুকুমে থাকে না; সাধারণ গোস্তের হুকুমে হয়ে যায়।

আর একটি পশুর অংশবিশেষ শুধু গোশত হাসিলের উদ্দেশ্যে হয়ে গেলে পুরো পশুই আর কুরবানীর জন্য থাকে না। তাই এতে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হয় না। এ মাসআলাই সঠিক। প্রশ্নের ঐ কথা ঠিক নয়।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৭৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৫; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/২৯০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৫

৩০৮৩. প্রশ্ন

আমি প্রতি বছর একা একটা গরু কুরবানী করি। গত বছরও একা কুরবানী করার নিয়তে গরু কেনার জন্য হাটে যাই। কিন্তু অস্বাভাবিক চড়ামূল্যের কারণে একা ক্রয় করা সম্ভব হয়নি। তাই গরু ক্রয়ের সময় শরিক নেওয়ার নিয়ত করে নেই এবং পরে আরেকজনকে শরিকে নিয়ে কুরবানী করি। প্রশ্ন হল, ঐভাবে কুরবানী করার দ্বারা কি আমার কুরবানী আদায় হয়েছে?

উত্তর

হ্যাঁ, আপনার কুরবানী সহীহ হয়েছে।

-কিতাবুল আছল ৫/৪০৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০; হেদায়া ৪/৪২৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭

প্রশ্ন:

আমাদের এলাকায় প্রসিদ্ধ আছে যে, বাকিতে কুরবানীর পশু ক্রয় করলে কুরবানী সহীহ হয় না। কুরবানীর পশু নগদমূল্যে ক্রয় করতে হবে। বাকিতে ক্রয় করলেও কুরবানীর আগে তার মূল্য পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় কুরবানী সহীহ হবে না। এই কথাটি কতটুকু সঠিক? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর:

প্রশ্নোক্ত ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ও ভিত্তিহীন। বাকিতে পশু ক্রয় করলেও তা দ্বারা কুরবানী জায়েয। আর বাকিতে ক্রয় করলে কুরবানীর আগেই মূল্য পরিশোধ করতে হবে এ কথাও ঠিক নয়। নগদ বা বাকি যেভাবেই পশু ক্রয় করা হোক তা দ্বারা কুরবানী করা সহীহ হবে।

৩৪৬৭. প্রশ্ন:

কোন কোন প্রাণী দ্বারা কুরবানী করা যায় এবং ঐ প্রাণীসমূহের বয়সসীমা সম্পর্কে জানালে উপকৃত হব।

উত্তর:

গৃহপালিত পশু তথা উট, গরু, মহিষ, দুম্বা, ভেড়া ও ছাগল দ্বারা কুরবানী করা যায়। উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। গরু বা মহিষ কমপক্ষে দু’বছরের হতে হবে। আর দুম্বা, ভেড়া বা ছাগল এক বছরের হতে হবে। তবে কোনো ভেড়া যদি ছয়মাস বা তদুর্ধ্ব বয়সের হয় কিন্তু শরীরের গঠনের দিক থেকে এক বছরের ভেড়ার মত হৃষ্টপুষ্ট হয়ে যায় তাহলে সেটি দ্বারাও কুরবানী সহীহ হবে।

বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৭

প্রশ্ন:

কুরবানীর গরু কিনতে গেলে দেখা যায়, লোকেরা গরুর দাঁত দেখে। যদি বিশেষ দুটি দাঁত উঠে তাহলে পছন্দ হলে কেনে, অন্যথায় ঐ গরু কেনে না। তারা মনে করে, বিশেষ দুই দাঁত না উঠলে সেই গরু দিয়ে কুরবানী করা যায় না।

এখন আমার জানার বিষয় হল, গরু কুরবানীর উপযুক্ত হওয়ার জন্য দুটি দাঁত উঠা কি জরুরি? আর যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায়, কোনো একটি গরুর দুই বছর হয়েছে, কিন্তু এখনও বিশেষ দুটি দাঁত উঠেনি তাহলে তা দিয়ে কুরবানী করলে সহীহ হবে কি না?

উত্তর:

গরু কুরবানীর উপযুক্ত হওয়ার জন্য দুই বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি। বিশেষ দাঁত উঠা জরুরি নয়। তবে যেহেতু বিশেষ দুটি দাঁত দুই বছর বয়স পূর্ণ হলেই উঠে থাকে তাই সাধারণত দুই দাঁত উঠাকে দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আলামত মনে করা হয়। এ কারণেই মানুষ কুরবানীর পশু কিনতে গেলে তা পরীক্ষা করে। এতে আপত্তির কিছু নেই। তবে যদি কোনো গরুর ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, দুই বছর পূর্ণ হলেও এখনও বিশেষ দুটি দাঁত উঠেনি তাহলে সেই গরু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে।

-সহীহ মুসলিম ২/১৫৫; বাযলুল মাজহূদ ১৩/১৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৮; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৬১১-১৩

প্রশ্ন:

বাজারে কুরবানীর গরু কিনতে গেলে দেখা যায়, কোনো কোনো গরুর জন্মগতভাবেই শিং থাকে না, তবে কুরবানীর বয়স হয়েছে। কোনো কোনো গরুর শিং-এর অগ্রভাগ ভাঙ্গা থাকে। জানার বিষয় হল, এ দু ধরনের গরু দ্বারা কুরবানী করলে তা সহীহ হবে কি না?

উত্তর:

যে পশুর শিং ওঠেনি সে পশু দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। কুরবানী সহীহ হওয়ার জন্য শিং থাকা জরুরি নয়। তদ্রূপ যে পশুর শিংয়ের অগ্রভাগ ভেঙ্গে গেছে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। হুজ্জিয়াহ ইবনে আদী বলেন, আমি আলী রা.কে জিজ্ঞাসা করলাম, শিং ভাঙ্গা পশু দ্বারা কুরবানী করার বিধান কী? তিনি বললেন, এতে অসুবিধা নেই।

-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৫০৩; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩

প্রশ্ন:

একজনকে বলতে শুনেছি, ছয় মাসের ছাগল যদি এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে এক বছর বয়সী ছাগলের মতো দেখায় তাহলে তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এই কথাটি কতটুকু সঠিক? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর:

আপনার শোনা কথাটি ঠিক নয়। ছাগল দ্বারা কুরবানী সহীহ হওয়ার জন্য তা অন্তত এক বছর বয়সী হওয়া জরুরি। হৃষ্টপুষ্ট হওয়ার কারণে এক বছরের ছাগলের মতো দেখালেও ১২ মাসের কম বয়সী ছাগল দ্বারা কুরবানী করা জায়েয হবে না। অবশ্য ছয় মাস বয়সী ভেড়া বা দুম্বা যদি হৃষ্টপুষ্ট হওয়ার কারণে এক বছর বয়সীর মতো দেখায় তাহলে তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয হবে। হাদীস শরীফে জাবের রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উট পাঁচ বছর পূর্ণ হয়ে ষষ্ঠ বছরে উপনীত না হলে আর গরু-মহিষ দু বছর পূর্ণ হয়ে তৃতীয় বছরে পদার্পণ না করলে আর ছাগল-ভেড়ার এক বছর পূর্ণ না হলে তোমরা তা দ্বারা কুরবানী করো না। তবে এ বিষয়টি যদি তোমাদের জন্য কঠিন হয় তাহলে ছয়মাসের দুম্বা, ভেড়া কুরবানী করতে পারবে।

- সুহাইল আহমদ . কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ

-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৪৩৪৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৯৬৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪২৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬৬; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২২

৩৯০৭. প্রশ্ন

আমাদের গরুর পাল আছে। একটি গরুর বয়স দুই বছর পূর্ণ হয়নি। কিন্তু মোটা তাজা হওয়ার কারণে দুই বছর বয়সী গরুর চেয়েও বড় মনে হয়। এক ব্যক্তি বলল ঐ গরু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে। তাই তা দিয়ে আমি কুরবানী দিই। আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব বিষয়টি জানতে পেরে বললেন ঐ গরু দ্বারা আপনার কুরবানী সহীহ হয়নি। জানতে চাই বাস্তবেই কি আমার কুরাবনী সহীহ হয়নি? যদি না হয় তাহলে এখন আমার করণীয় কী?

উত্তর

জী, ঐ গরু দ্বারা কুরবানী সহীহ হয়নি। ইমাম সাহেব ঠিকই বলেছেন। কেননা গরু দ্বারা কুরবানী সহীহ হওয়ার জন্য গরুর বয়স চান্দ্রমাস হিসাবে কমপক্ষে দুই বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি। দুই বছরের কম বয়সী গরু মোটা তাজা হওয়ার কারণে বেশি বয়সের মনে হলেও তা দ্বারা কুরবানী সহীহ নয়। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

لَا تَذْبَحُوا إِلَّا مُسِنَّةً، إِلَّا أَنْ يَعْسُرَ عَلَيْكُمْ، فَتَذْبَحُوا جَذَعَةً مِنَ الضَّأْنِ.

তোমরা (কুরবানীতে ) ‘মুসিন্না’ ছাড়া যবেহ করবে না। তবে সংকটের সময় ছ’মাস বয়সী ভেড়া দুম্বা যবেহ করতে পারবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৬৩

হাদীস শরীফে যে ‘মুসিন্না’ পশু যবেহ করতে বলা হয়েছে, গরু মহিষের ক্ষেত্রে মুসিন্না হল যার বয়স দু’বছর পূর্ণ হয়ে তৃতীয় বৎসরে পড়েছে।

সুতরাং ঐ গরু দ্বারা যেহেতু আপনার কুরবানী আদায় হয়নি তাই এখন আপনার কর্তব্য হল কুরবানীযোগ্য যে কোনো একটি পশুর মূল্য সদকা করে দেয়া।

-শরহুন নববী আলা সহীহি মুসলিম ১৩/১১৭; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৮৭

প্রশ্ন:

কুরবানীর পশুর কান বা লেজ কী পরিমাণ না থাকলে বা কাটা থাকলে এর দ্বারা কুরবানী সহীহ হয় না?

উত্তর:

কুরবানীর পশুর কান বা লেজ অর্ধেক বা এরচেয়ে বেশি না থাকলে এর দ্বারা কুরবানী করা সহীহ নয়। যদি অর্ধেকের চেয়ে বেশি অংশ থাকে তাহলে এর দ্বারা কুরবানী করা সহীহ হবে।

-শরহু মাআনিল আছার ২/২৭১; কিতাবুল আসল ২/৪৯৪; শরহু মু

৪১৫২. প্রশ্ন

আমার নানা গরু লালন-পালন করেন। প্রতি বছর কুরবানীর সময় পালিত গরুগুলোর মধ্য থেকেই একটিকে কুরবানী করেন। এ বছর যে গরুটি কুরবানী করতে চাচ্ছেন সেটির অনেকগুলো দাঁত নেই। কিছু দাঁত আছে; তবে সেগুলোও ভাঙা। তবে গরুটি এখনও কষ্ট করে হলেও খাদ্য চিবিয়ে খেতে পারে। জানতে চাচ্ছি, এ গরুটি দিয়ে কুরবানী সহীহ হবে কি?

উত্তর

গরুটির যেহেতু এ পরিমাণ দাঁত আছে, যা দ্বারা সে খাদ্য চিবিয়ে খেতে পারে তাই ঐ গরু দিয়ে কুরবানী করা সহীহ হবে। কেননা এক্ষেত্রে খাদ্য চিবিয়ে খেতে পারাই মূল বিষয়; দাঁত বেশি বা কম থাকা মুখ্য নয়।

-মাবসূত, সারাখসী ১২/১৭; বাদায়েউস সনায়ে ৪/২১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৮

৩৪৯৮. প্রশ্ন:

আমাদের গ্রামের এক ব্যক্তি কুরবানী করার জন্য ঈদের দুদিন আগে হাট থেকে একটি গাভি ক্রয় করে আনে। ঘটনাক্রমে বাড়ির আরেকটা গাভির সাথে ঐ গাভির লড়াই লেগে ক্রয়কৃত গাভির একটি শিং ভেঙ্গে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, এমন শিং ভাঙ্গা গাভি দ্বারা কুরবানী করলে কুরবানী হবে কি না?

উত্তর:

গাভিটির শিং যদি একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গিয়ে থাকে, যার দরুণ মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায় তাহলে এ পশু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে না। পক্ষান্তরে শিং ভাঙ্গার কারণে মস্তিষ্কে যদি আঘাত না পৌঁছে থাকে তাহলে এ পশু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে।

-মুসনাদে আহমদ ১/৯৫, হাদীস ৭৩৪; ইলাউস সুনান ১৭/২৩৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৭

২৯৪০ . প্রশ্ন:

গত বছর আমাদের কুরবানীর পশুটি ট্রাক থেকে নামানোর সময় এক পায়ে আঘাত পেয়ে তা ফুলে যায়। যার ফলে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে একটু কষ্ট হয় এবং হাঁটাচলার সময় ঐ পাটি তুলনামূলক কম ব্যবহার করে। আমার প্রশ্ন হল, উক্ত পশু দ্বারা আমাদের কুরবানী সহীহ হয়েছে কি?

উত্তর:

হ্যাঁ, উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী করা সহীহ হয়েছে। কেননা পশুটির পা একেবারে ভেঙ্গে যায়নি; বরং আঘাতের কারণে হাঁটতে কষ্ট হত। আর এ ধরনের পশুর কুরবানী সহীহ।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৮০২; জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৪৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬৬; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪২৬; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৬

৩৪৬৫. প্রশ্ন:

গরু-ছাগলের যদি অধিকাংশ দাঁতই না থাকে, এমনকি দু-একটি ছাড়া সবগুলো পড়ে যায় তবে তা দ্বারা কুরবানী করা কি সহীহ হবে?

উত্তর:

গরু-ছাগলের অধিকাংশ দাঁত না থাকলেও যে কয়টি দাঁত আছে তা দ্বারা যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে পারে তবে সেটি দ্বারা কুরবানী সহীহ হয়ে যায়। কিন্তু দাঁত পড়ে যাওয়ার কারণে যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে না পারে তবে ঐ পশু কুরবানীর উপযুক্ত নয়। সুতরাং দু-একটি ছাড়া সব দাঁত পড়ে গেলে সে পশু ঘাস চিবিয়ে খেতে না পারার সম্ভাবনাই যেহেতু বেশি তাই এমন জন্তু দ্বারা কুরবানী না করাই বাঞ্ছনীয়।

শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৭/৩৫৫; ফাতাওয়া কাযী খান ৯৩/৩৫৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫

৩০৮১. প্রশ্ন

আমাদের একটা গরু আছে। কোনো এক রোগের কারণে যার লেজের সামান্য অংশ লম্বা পশমসহ ঝরে পড়েছে। আগামী ঈদুল আযহায় গরুটি কুরবানী দিতে চাচ্ছি। শরীয়তের দৃষ্টিতে তা বৈধ হবে কি?

উত্তর

হ্যাঁ, ঐ গরু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয হবে। কেননা কোনো গরুর লেজ যদি অর্ধেকের বেশি অবশিষ্ট থাকে তবে তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয।

-মুখতাছারুত তহাবী ৭/৩৫৫; হেদায়া ৮/৪৩৩; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৩

[ মাসিক আলকাউসারের বিভিন্ন সংখ্যা থেকে সংগৃহীত ]

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url