অবৈধ রষ্ট্র ইসরাইল বিশ্ব শান্তির প্রধান অন্তরায়- (১ম মাসিক)
الحمد لله الاكرم
الذي خلق الانسان وكرمه وعلمه من البيان مالم يعلم والصلاة والسلام علي من لا نبي
بعده اَمَّا بَعْدُ فَقَدْ قَالَ اللَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى فَأَعُوْذُ
بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ :
لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةٌ لِلَّذِينَ آمَنُوا الْيَهُودَ
وَالَّذِينَ أَشْرَكُوا وَلَتَجِدَنَّ أَقْرَبَهُمْ مَوَدَّةٌ لِلَّذِينَ آمَنُوا
الَّذِينَ قَالُوا إِنَّا نَصَارَى ذَلِكَ بِأَنَّ مِنْهُمْ قِسِيسِينَ
وَرُهْبَانًا وَأَنَّهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ
وَقَالَ رَسُولُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الكفر ملة واحدة أَوْ كَمَا قَالَ
عَلَيْهِ الصَّلَوةُ وَالسَّلَامُ
অদ্যকার এই মহতি
জলসার মান্যবর সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারক মণ্ডলী, সুদক্ষ পরিচালক ও আজকের সুধী! সবাইকে মুবারকবাদ জানিয়ে আমার নির্ধারিত বিষয়ের
উপর আলোচনা শুরু করছি।
যখন ইহুদী নাসারা
কর্তৃক গোটা বিশ্ব মানচিত্র থেকে ইসলাম ও মুসলিম মিল্লাতকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে নতুনভাবে পৃথিবীর ইতিহাস তৈরির ভয়াবহ
সকল আয়োজন সম্পন্ন হতে চলেছে এবং শক্তিধর মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতার মসনদে নিজেদের
তল্পিবাহক পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা করে গোটা মুসলিম জাতিকে কোণঠাসা করে রাখার হীন ষড়যন্ত্র
চলছে। এমনি এক মুহূর্তে “অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায়”
আলোচ্য বিষয় নির্ধারণ করায় আয়শা সিদ্দীকা রা. পাঠাগারকে জানাই
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
প্রিয় সাথী ও বন্ধুগণ!
ঊনবিংশ শতকের শেষ
দিকে ব্রিটেনে সারা বিশ্বের ইহুদী জাতির ঐক্যের কুহেলিকাপূর্ণ আহ্বানের সূত্রপাত ঘটে।
অতঃপর কিছু সংখ্যক ইহুদী একটি একক ইহুদী জাতির চিন্তা ও নিজেদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জায়ন পার্টি নামে একটি দল গঠন করে- এ দলটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের
সময় ব্রিটেন ও আমেরিকার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করে- উসমানী সরকারের পরাজয় ঘটলে
ফিলিস্তিনকে ইহুদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। পরবর্তীতে ১৯১৭ সালে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে
ইহুদী জাতির কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি ব্রিটিশ মন্ত্রী সভায় স্থান পায়। অতঃপর ১৯২০
সালে মিত্রশক্তি ও আন্তর্জাতিক সমাজ ফিলিস্তিনের অভিভাবকত্বকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশদের
হাতে তুলে দিলে ফিলিস্তিনে ইহুদীদের আগমনের দরজা খুলে যায়। ফলে ইংরেজদের সহায়তায়
অতিদ্রুত ফিলিস্তিনে ইহুদীদের বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এমনকি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন তৈরি হতে থাকে। অতঃপর এক পর্যায়ে ফিলিস্তিনের
প্রকৃত অধিবাসী ও দখলদার ইহুদীদের মাঝে তুমুল সংঘর্ষ চলতে থাকে। চল্লিশ দশক থেকে ফিলিস্তিন
ইস্যু আরব ইস্যুতে পরিণত হয় এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াদীর শীর্ষে স্থান লাভ করে । পরবর্তীতে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্য প্রাচ্যে রাজনৈতিক সামরিক
ও স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে মার্কিনপন্থী ইহুদী নেতা ডেভিড বেন ১৯৪৮
সালের ১৫ মে ফিলিস্তিনের পবিত্র মাটিতে প্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইসরায়েল নামে জারজ রাষ্ট্রের
ঘোষণা দেয়।
বন্ধুগণ!
এই ঘোষণার সঙ্গে
সঙ্গে الكفر
ملة واحدة এর বাস্তব স্বরূপ স্পষ্ট হয়ে গেল। ইহুদী
নেতা কর্তৃক ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রম্যান নয়া
ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দান করে ।
বন্ধুগণ!
তখন থেকেই শুরু
হল ইহুদীদের নবতর ষড়যন্ত্র অর্থাৎ মুসলমানদের পবিত্রভূমি মক্কা মদীনাসহ নীলনদের অববাহিকা
থেকে ফোরাতের অববাহিকা পর্যন্ত গোটা আরব বিশ্বকে গ্রাস করে একটি বৃহত্তর ইস্রাইল রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠা করা। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দশকে সুইজারল্যান্ডের
বাসিল নগরীতে অস্ট্রেলিয়ার দুর্ধর্ষ সাংবাদিক থিওডর হার্জেলের নেতৃত্বে বিশ্ব ইহুদী
সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন থেকে তারা গোটা বিশ্বকে কন্ট্রোল করার সুদূর প্রসারী
ষড়যন্ত্র ও সুপরিকল্পিত নীল নকশা প্রণয়ন করে। আর এ কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কয়েকটি
বিষয়কে তারা মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে যা সংক্ষিপ্তাকারে আমি তুলে ধরছি।
১. শক্তিশালী গোয়েন্দা
সংস্থা,
২. মিডিয়া, ৩. অপসংস্কৃতির
ছয়লাব ৪. শক্তিশালী শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোতে যুদ্ধ বাঁধিয়ে একপক্ষকে অস্ত্র দিয়ে
সহযোগিতা করে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের কাঠামোকে দুর্বল করে রাখা।
বন্ধুগণ!
ইহুদীরা তাদের ষড়যন্ত্র
বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সারাবিশ্বে বিস্তার করে রেখেছে তাদের শক্তিশালী অনেক গোয়েন্দা
সংস্থা। এসবের মাঝে অন্যতম হল- মোসাদ, এম,আই,সি,
সি,আই,এ ইত্যাদি। এসব সংস্থার কাজ হল প্রতিটি রাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করে বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রের
মাঝে বিশৃঙ্খলা, মারামারি, হানাহানি, গৃহযুদ্ধ, ও সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেয়া। তাদের আরেকটি অন্যতম কাজ হল পৃথিবীর দুই সংখ্যাগরিষ্ঠ
জাতি মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের মাঝে শত্রুতার প্রাচির দাড় করিয়ে দেওয়া। এর জন্য তারা
প্রধান হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছে বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত মহানবী স. এর কটূক্তি
করা। মার্কিন গবেষক রেপিষ্টার গ্রাফিন তার এক প্রবন্ধে লেখেন ইতিপূর্বে মুসলমানরা আমেরিকা, বৃটেন আর ইসরায়েলের শত্রু ছিল তবে রাসূল সা. কে ব্যঙ্গ চিত্র প্রকাশের মাধ্যমে
ডেনমার ফ্রান্স এবং জার্মানিও মুসলমানদের শত্রুতে পরিণত হল । গ্রাফিন আরও লিখেছেন- সিরিয়া, ইরান ও লেবাননের
ডেনমার্কের দূতাবাসে অগ্নিসংযোগ এসবই হয়েছে CIA MI.C এবং মোসাদের ভাড়া করা লোকদের মাধ্যমে। এর জ্বলন্ত প্রমাণ সম্প্রতি রাসূল সা. কে
কটূক্তকারী ফিল্ম ইনোসেন্স অব মুসলিম নির্মাতাও
হল কুখ্যাত ইহুদী স্যাম ভেসিলি ।
বন্ধুগণ!
হলফ করে বলা যেতে
পারে বর্তমানে বাংলাদেশে নাস্তিক ব্লগার কর্তৃক রাসূল স. কে কটূক্তি করার পিছনে নিঃসন্দেহে ইহুদী চক্রের হাত রয়েছে।
বন্ধুরা আমার!
এ সবের দ্বারা ইহুদীদের
উদ্দেশ্য হল ইউরোপীয় সাধারণ মানুষ ও শাসক শ্রেণীকে বোঝানো পাশ্চাত্য ও ইসলামের মাঝে
সভ্যতার বাস্তব সংঘাত শুরু হয়ে গেছে সুতরাং তোমরা যুদ্ধ করতে থাক আর আমরা দর্শক গ্যালারিতে
বসে বসে তামাশা দেখতে থাকি।
প্রিয় সাথী ও বন্ধুগণ!
বিশ্বে অশান্তি
সৃষ্টির আরেকটি মাধ্যম হল মিডিয়া। পৃথিবীর প্রায় ৯৫% মিডিয়া তাদের হাতে। যেমন- এ.পি
ইউপি,
এএফপি এসবই ইহুদীদের কন্ট্রোলে। এ ছাড়াও বি.বি.সি অর্থাৎ ব্রিটিশ
ব্রটকাস্টিং কর্পোরেশন এবং ভয়েস অব আমেরিকাও ইহুদীদের হাতের পুতুল । বিশ্বের অন্যতম
প্রধান সংবাদ সংস্থা “রয়টার্স” এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়াস রয়টার একজন কুখ্যাত ইহুদী। ইহুদীরা এসব মিডিয়ার মাধ্যমে নির্লজ্জতা বেহায়াপনা বেলেল্লাপনা ছয়লাবের মাধ্যমে
পারিবারিক পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত অশান্তির জাল বিস্তার করে রেখেছে।
এছাড়া তাদের স্বার্থসিদ্ধিকারী বিভিন্ন ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা অর্থাৎ চোরকে
দরবেশ,
আলেমকে জালেম, জালেমকে মাজলুম
বানানো এসব মিডিয়ার প্রধানতম কাজ।
প্রিয় বন্ধুরা
আমার!
মুসলিম জাগরণ, বিপ্লব এবং আন্দোলনকে তারা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ আখ্যা দিয়ে এসব মিডিয়ার মাধ্যমেই
তারা মুসলমানাদের কোণঠাসা করে রাখে। মুসলমানদের মাঝে কোন জাগরণ সৃষ্টি হলেই তখন তাদেরকে
প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধ-উগ্র-গোড়া মৌলবাদী-সেকেলে বর্বর, মানবতা বিরোধী ইত্যাদি বলে তিলকে তাল বানিয়ে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করে তাদের
আন্দোলন সংগ্রামকে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা করতে থাকে। যার জ্বলন্ত প্রমাণ হল বর্তমানে
হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা।
বন্ধুরা আমার!
পৃথিবীর যেখানেই
মুসলমানরা নির্যাতিত। মনে করবেন ইহুদীদের ষড়যন্ত্রকারী হাত সেখানে রয়েছে। আফগান, ইরাক হামলা। ইতিপূর্বে ইরাককে উস্কে দিয়ে কুয়েতের সাথে যুদ্ধ। বর্তমানেও আরব
বসন্তের নামে মধ্যপ্রাচ্যে মুসলমানে মুসলমানে রক্তপাত। সিরিয়ায় বিদ্রোহের মাধ্যমে
হাজার হাজার মুসলিম হত্যা এসবই ষড়যন্ত্রকারী ইহুদীদের কারসাজী।
বন্ধুরা আমার!
সারা বিশ্বে অশান্তি
সৃষ্টিকারী অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল, মধ্যপ্রাচ্যে বিষফোঁড়া
হয়ে জেকে বসে আছে। শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়; বরং গোটা পৃথিবীতে
অশান্তি সৃষ্টি করে রাখছে। বিশেষত মুসলিম রাষ্ট্রগুলো যেন শান্তিতে থাকতে না পারে ধৃত
ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল তা সবই করে চলেছে।
বন্ধুগণ!
ভাবতে অবাক লাগে
যে, ইউরোপ, আমেরিকা ফ্রান্স সহ মোড়ল রাষ্ট্রগুলো বিশ্বসন্ত্রাসী
ইসরাইলের এ সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রমগুলোকে বৈধতা দিয়ে তাদেরকে এসব কাজে আরো সহযোগিতা
করে চলেছে। কাজেই স্পষ্ট করে বলতে চাই, যতদিন পর্যন্ত এই
বিশ্বসন্ত্রাসীর আড্ডাখানা, সন্ত্রাসীদের গডফাদার, মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলকে লাগাম টেনে ধরা না হবে ততদিন পর্যন্ত
বিশ্বে শান্তি আসতে পারে না। শান্তি আসবেও না। কাজেই মুসলিম বিশ্বকে আর বসে থাকলে চলবে
না। বরং রাষ্ট্রগুলোকে নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তম স্বার্থে একপ্লাটফর্মে
আসতে হবে। আজকে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো যদি এক প্লাটফর্মে চলে আসে সেদিন বেশী দূরে নয়
যেদিন সাম্রাজ্যবাদী মোড়ল রাষ্ট্রগুলোর পতন ঘটবে। পৃথিবী থেকে সকল অশান্তি দূর হয়ে
শান্তি ফিরে আসবে! তবুও কেন আমরা এক হতে পারছি না? আমাদের কিসের অভাব? আমাদের রয়েছে অর্ধশতাধিক স্বাধীন সার্বভৌম
রাষ্ট্র। আমাদের রয়েছে পেট্রো ডলারে সমৃদ্ধ বিলিয়ন বিলিয়ন সম্পদ, রয়েছে প্রায় দুইশত কোচি দক্ষ জনশক্তি। সর্বোপরি আমাদের আছে তেল, গ্যাস, কয়লা, অস্ত্র আর চমৎকার ভৌগোলিক অবস্থান। সুতরাং বাহ্যিক এই উপকরণগুলো সঙ্গে নিয়ে আল্লাহর
উপর পরিপূর্ণ ভরসা রেখে রাসূল (সা.) এর সুন্নতের অনুসরণ করে যদি সম্মুখপানে এগিয়ে
যাই। তবে বিজয় আমাদেরই হবে ইনশাআল্লাহ ।
وانتم الاعلون ان
كنتم مؤمنينين। আর তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হও। আল্লাহ আমাদের সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায়
ভূমিকা রাখার তৌফিক দান করুন। আমীন।
نَصْرُ مِنَ اللَّهِ
وَفَتْحٌ قَرِيب السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ